March 28, 2024, 11:58 am
বুয়েট ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। ফাইল ছবি
ডিএন২৪ ডেস্কঃ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলামকে ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। এমন সোমবার রাতে ক্যাম্পাসে আরবারের জানাজায় তিনি ছিলেন না। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার বিকাল ৫ টার মধ্যে তিনি সশরীরে এসে এ বিষয়ে জবাবদিহি না করলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
সোমবার উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম তার কার্যালয়ে গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। সেখানে তিনি শিক্ষকদের সঙ্গে একটি সভায়ও অংশ নেন। তবে যেখানে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, সেই শের-ই বাংলা হলে তিনি যাননি, এমনকি প্রকাশ্যেও দেখা যায়নি তাকে। তার প্রকাশ্যে না আসার বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ। তার অনুপস্থিতিতে বিস্মিত হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সবার একটাই প্রশ্ন, ‘ভিসি কোথায়?’
বুয়েট শহীদ মিনারে জড়ো হয়ে শিক্ষার্থীরা আজ সকালে উপাচার্যকে এ বিষয়ে জবাবদিহি করার আহ্বান জানান।
আবরার খুন হওয়ার পর সোমবার ভিসিকে মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। এ নিয়েই তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র খুন হওয়া এবং এরপর উত্তাল ক্যাম্পাসে প্রশাসনের সর্বোচ্চ ব্যক্তির অনুপস্থিতি তাদের অবাক করেছে। এমন পরিস্থিতিতে আজ মঙ্গলবার বিক্ষোভ মিছিলে ভিসির বিরুদ্ধেও স্লোগান দেন তারা।
জানা গেছে, আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় কান্নায় ভেঙে পড়েন তার সহপাঠী থেকে শুরু করে সবাই। শিক্ষকরা এ হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন। শিক্ষক সমিতির নেতারা আজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে সামিল হন। সকালে বুয়েটের শহীদ মিনারে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশকালে বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি এ কে এম মাসুদ বলেন, ‘ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের সব দাবির সঙ্গে একমত।’
ছাত্রকল্যাণ সম্পাদকও শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে যোগ দিয়ে জানান, তিনি ভিসিকে ফোন দেবেন। তবে এসবের কোনোটিতেই নেই বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। এমনকি গতরাতে আবরারের জানাজায়ও তাকে দেখা যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অভিভাবককে শিক্ষার্থীরা পাশে না পেয়ে চরম ক্ষুব্ধ।
সোমবার দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে উপাচার্যকে মুঠোফোনে কল দেন প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাফর ইকবাল খান। তখন উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) কল রিসিভ করেন। তিনি জানান, উপাচার্য অসুস্থ। এজন্য ক্যাম্পাসে আসতে পারবেন না।
এদিকে বুয়েট ভিসির অবস্থান সম্পর্কে আজ সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বুয়েটের ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম অসুস্থ বলে এখনও শিক্ষার্থীদের কাছে যাননি, তবে তিনি যাবেন।
ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে শনিবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ। এর জের ধরে রোববার রাতে শেরেবাংলা হলের নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পিটুনির সময় নিহত আবরারকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালায় খুনিরা।
তবে আবরার কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে নিশ্চিত করেছেন তার পরিবারের সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা।
হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ না রাখতে সিসিটিভি ফুটেজ মুছে (ডিলেট) দেয় খুনিরা। তবে পুলিশের আইসিটি বিশেষজ্ঞরা তা উদ্ধারে সক্ষম হন। পুলিশ ও চিকিৎসকরা আবরারকে পিটিয়ে হত্যার প্রমাণ পেয়েছেন।
এ ঘটনায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে এ ঘটনায় ১৪ জন জড়িত বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) কৃষ্ণপদ রায়।
এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে তার বাবা চকবাজার থানায় সোমবার রাতে একটি হত্যা মামলা করেন। বুয়েট কর্তৃপক্ষ একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে। পাশাপাশি গঠন করেছে একটি তদন্ত কমিটিও।
এদিকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ মেলায় বুয়েট শাখার সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১১ জনকে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।