April 18, 2024, 10:08 am

শিরোনাম :
বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সাহাদাত হোসেন রনি পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সাহাদাত হোসেন রনি ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবসে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সাহাদাত হোসেন রনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে আমাদের ধরে রাখতে হবে: সাহাদাত হোসেন রনি ৭ মার্চের ভাষণ সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য ঐতিহাসিক ভাষণ: সাহাদাত হোসেন রনি একুশের মূল চেতনা আমাদের তরুণ প্রজন্মকে ধারণ করতে হবে: সাহাদাত হোসেন রনি একুশ আমাদের চেতনা, একুশ আমাদের বিশ্বাস: সাহাদাত হোসেন রনি স্বাধীনতার পূর্ণতার দিন বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: সাহাদাত হোসেন রনি কক্সবাজার ১ আসনে নিশ্চিত পরাজয় জেনে শেষ মূহুর্তে জাফর আলমের ভোট বর্জনের ঘোষণা বাঙালি জাতির আস্থার নাম হলো ছাত্রলীগ: সাহাদাত হোসেন রনি
গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশে কর্মরত কনস্টেবল শরীফ হত্যার ৩ আসামী আটক

গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশে কর্মরত কনস্টেবল শরীফ হত্যার ৩ আসামী আটক

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত কনস্টেবল শরীফ
(৩৩) হত্যার লোমহর্ষক রহস্য উদঘাটন এবং হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত মূলহোতাসহ ০৩ জনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-১\ হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা চাকু ও বাসের হুইল রেঞ্জ উদ্ধার এবং রক্তমাখা বাসটি জব্দ।
১। গত ০৪ মার্চ ২০২০ তারিখ সকাল আনুমানিক ০৭৩০ ঘটিকায় গাজীপুর
মহানগরীর ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের ০৪ নং গেইটের সামনে থেকে অজ্ঞতনামা এক যুবকের
গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে নিহত যুবকের পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব
না হওয়ায়, পুলিশের সকল আইনি কার্যক্রম শেষে গত ০৮ মার্চ ২০২০ তারিখ বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে গাজীপুর মহানগরীর পূর্ব চান্দনা কবরস্থানে দাফন করা হয়। বর্ণিত হত্যাকান্ডের
ঘটনাটি সারাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্বের
সাথে প্রচারিত হয়। ক্লুলেস এই নির্মম হত্যাকান্ডের প্রেক্ষিতে র‍্যাব-১ তাৎক্ষনিকভাবে
হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে দ্রুততার সাথে ছায়া তদন্ত শুরু করে
এবং গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
২। পরবতর্ীতে গত ১২ মার্চ ২০২০ তারিখে পিবিআই কতর্ৃক লাশের ফিঙ্গার
প্রিন্টের মাধ্যমে নিহত যুবকের পরিচয় সনাক্ত করে জানা যায় নিহত ব্যক্তির নাম মোঃ শরীফ
আহামেদ (৩৩)। তিনি ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানার ঝিলকি এলাকার মোঃ আলাউদ্দিন ফকিরের
ছেলে। নিহত শরীফ আহমেদ গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) ট্রাফিক দক্ষিণ
বিভাগে প্রায় ৬ মাস যাবত কনস্টেবল পদে কর্মরত ছিলেন। নিহতের বাবা মোঃ আলাউদ্দিন
হোসেন একজন পুলিশ সদস্য। তিনি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা শহর ফাঁড়িতে কনস্টেবল
পদে কর্মরত আছেন। নিহতের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর গাজীপুরসহ সারাদেশে ব্যাপক
চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। গত ১২ মার্চ ২০২০ ইং তারিখ গাজীপুরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কবর থেকে লাশ উত্তোলনের জন্য আবেদন করা হয়। পরে আদালতের
নির্দেশে কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে সনাক্তের পর তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
৩। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৪ মার্চ ২০২০ তারিখ আনুমানিক ১৭৩০ ঘটিকায় র‍্যাব- ১, উত্তরা, ঢাকা এর একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যে গোপন সংবাদেও ভিত্তিতে
জানতে পারে যে, বর্ণিত হত্যাকান্ডের মূলহোতা গাজীপুর মহানগরীর শ্রীপুর থানাধীন
গড়গড়িয়া মাষ্টারবাড়ী এলাকায় আত্মগোপন করে আছে। প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে আভিযানিক দলটি গত ১৪ মার্চ ২০২০ তারিখ রাত ২১৩০ ঘটিকায় বর্ণিত স্থানে অভিযান
পরিচালনা করে হত্যাকান্ডের প্রধান পরিকল্পনাকারী এবং হত্যাকারী ১) মোঃ মোফাজ্জল হোসেন (২৮), পিতা- মোঃ আব্দুল মালেক,গাজীপুর’কে গ্রেফতার করে এবং তার দেওয়া তথ্য মতে ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা
এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ২) মোঃ মাসুদ মিয়া (২৫), পিতা- মৃত জবান আলী, সাং-মোজাহাদী, থানা-তারাকান্দা, জেলা-ময়মনসিংহ ও ৩) মোঃ মনির হোসেন (৩০), পিতা-মোঃ আব্দুল করিম, সাং-দরিয়াকোনা, থানা-কমলাকান্দা, জেলা-নেত্রকোনা, বর্তমান ঠিকানা- নাওজোর, থানা-বাসন, জিএমপি, গাজীপুর’দেরকে গ্রেফতার করে।
পরবতর্ীতে গ্রেফতারকৃত আসামীদের দেওয়া তথ্যমতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত তাকওয়া
পরিবহনের ০১ টি বাস (যার রেজিঃ নম্বর-গাজীপুর-জ-১১-০১৭৫), রক্তমাখা গাড়ীর হুইল রেঞ্জ, ০১ টি চাকু এবং ভিকটিমের ০৩ টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীরা বর্ণিত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
৪। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, নিহত শরীফ আহম্মেদ একজন পুলিশ কনস্টেবল। তিনি
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত ছিলেন। নিহত পুলিশ কনস্টেবল শরীফ এর সাথে মোফাজ্জল ও গাজীপুরের তাকওয়া বাসের চালক মনির এর পূর্ব পরিচয় ছিল। কিছুদিন পূর্বে কনস্টেবল শরীফ এর সাথে তাদের দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। উক্ত দ্বন্দ্বের জেরে মোফাজ্জল এবং মনির দুজনে শরীফকে হত্যার পরিকল্পনা করে। যার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে ছিল ধৃত আসামী মোফাজ্জল হোসেন। ধৃত আসামী মোফাজ্জলের পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ০১
মার্চ ২০২০ তারিখ তারা কনস্টেবল শরীফকে খুন করার জন্য মোফাজ্জল তার ময়মনসিংহের
গ্রামের বাড়ীর দুঃসম্পর্কের আত্মীয় কুখ্যাত ভাড়াটে খুনী মাসুদকে ১০,০০০/- টাকার
বিনিময়ে খুনের চুক্তিতে ভাড়া করে এবং এই তাকে অগ্রীম ৫,০০০/- টাকা প্রদান করে।
গত ০২ মার্চ ২০২০ তারিখ খুনের চুক্তি অনুযায়ী তারা মাসুদকে গাজীপুরে নিয়ে আসে
এবং ধৃত আসামী মনিরের বাসায় বসে হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী
গত ০৩ মার্চ ২০২০ তারিখ দুপুরে তাকওয়া বাসের ড্রাইভার মনির ৯৯ টাকার মার্কেট
থেকে একটি চাকু ক্রয় করে মাসুদকে দেয় শরীফকে খুন করার উদ্দেশ্যে।
৫। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ০৩ মার্চ ২০২০ তারিখ রাত আনুমানিক ১১৩০ ঘটিকার
সময় ধৃত আসামী মোফাজ্জল কৌশলে নিহত কনস্টেবল শরীফকে ভোগড়া বাইপাস এলাকায়
নিয়ে আসার পর তাকে তাকওয়া পরিবহনে উঠায়। পরবতর্ীতে ড্রাইভার মনির হোসেন
বাসটিকে চালিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডে শ্রীপুরের মাওনার উদ্দেশ্যে রওনা হয় এবং
জয়দেবপুরের ভবানীপুর বাজার থেকে ইউটার্ন নিয়ে পুনরায় চান্দনা চৌরাস্তার দিকে যেতে
থাকে। পথিমধ্যে চলন্ত বাসের ভিতর আসামীদের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা উক্ত বাসের দরজা-জানালা বন্ধ করে দেয়। রাত আনুমানিক ০১৩০ ঘটিকার সময় বাসটি গাজীপুর হোতাপাড়া আসার পর আসামীদের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মাসুদ বাসটিতে থাকা
বাসের লোহার হুইল রেঞ্জ দ্বারা পিছন থেকে শরীফের মাথায় পর পর বেদম আঘাত করে। ফলে শরীফের
মাথা ফেটে রক্ত পড়তে থাকলে সে অজ্ঞান হয়ে গাড়ির মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। পরবতর্ীতে ধৃত
আসামী মোফাজ্জল ও মাসুদ ০২ জনে মিলে নাইলনের রশি দ্বারা প্রথমে শরীফের দুই হাত
বেঁধে গাড়ির পিছনের দিকে নিয়ে যায় এবং মোফাজ্জল শরীফের বুকের উপর বসে এ
আসামী মনির তার নাওজোরস্থ ভাড়া বাসা থেকে মোফাজ্জল ও মাসুদের জন্য পরিষ্কার লুঙ্গি গেঞ্জি নিয়ে আসে এবং তারা তিন জন গোসল করে রাতের খাবার খেয়ে একত্রে মনিরের বাসায় রাত্রিযাপন করে। গত ০৪ মার্চ ২০২০ তারিখ সকাল আনুমানিক ০৬ ঘটিকার সময় ড্রাইভার মনিরসহ তিন জন উক্ত গাড়িটি নিয়ে কোনাবাড়ী সার্ভিসিং এ যাওয়ার
উদ্দেশ্যে বের হয়। তাদের রক্তমাখা জামা-কাপড় গুলো গাড়ির টুলবক্স থেকে বের করে কড্ডা ব্রীজের নীচে গভীর পানিতে ফেলে দেয়। পরে মাসুদ তার বাড়ি ময়মনসিংহের তারাকান্দায় চলে যায়।
ধৃত আসামী মোফাজ্জল ও মনির তাদের স্বাভাবিক কাজকর্মে যোগদান করে। উল্লেখ্য,
মাসুদ একজন থ্রি হুইলার ড্রাইভার, সে শম্ভুগঞ্জ-ময়মনসিংহ রোডে মাহেন্দ্র গাড়ী চালায়। র‍্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামীরা উক্ত খুনের ঘটনার সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং ঘটনার মর্মান্তিক ও লোমহর্ষক বর্ণনা দেয়।
৭। গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Comments are closed.




© All rights reserved © 2020 districtnews24.Com
Design & Developed BY districtnews24.Com