April 18, 2024, 9:39 pm
বরগুনা (দক্ষিণ) প্রতিনিধি
এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের দিন মোবাইল এসএমএস ও ওয়েবসাইটে প্রার্থী দেখেন বিজ্ঞানের তিন বিষয় অকৃতকার্য। এক বছর পর পুনরায় পরীক্ষা দেয়ার জন্য ফরমপূরণ করতে গিয়ে ট্রান্সক্রিপ্টে দেখে সব বিষয় কৃতকার্য।
এমন অদ্ভুত কাণ্ড ঘটেছে বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া ছাত্রী তাহিরা খানের ক্ষেত্রে।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, টেলিটকের ভুল।
বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ফল বিভ্রাটের কারণে এক ছাত্রীর শিক্ষা জীবন থেকে হারিয়ে গেছে একটি বছর।
জানা গেছে, বরগুনা জেলার পাথরঘাটা পৌরসভার হাসপাতাল সড়কের মো. জাকির হোসেন খানের মেয়ে তাহিরা খান ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের বিজ্ঞান বিভাগে বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসএসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। ১৭ জুলাই প্রকাশিত ফলাফলে মোবাইল এসএমএস ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দেখতে পান তাহিরা খান বিজ্ঞান, রসায়ন ও উচ্চতর গণিতে অকৃতকার্য হয়েছে।
তাহিরা খান ১৭ ডিসেম্বর পুনরায় পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য ফরমপূরণ করতে বরগুনা সরকারি কলেজে একাডেমিক ট্রান্সিক্রিপ্ট তুলতে গিয়ে তাহিরা খান দেখতে পান কোনো বিষয়ই সে অকৃতকার্য হয়নি।
এসএসসি পরীক্ষায়ও ভালো ফলাফল অর্জন করা ছাত্রী তাহিরা এমন অপ্রত্যাশিত ফলাফলে মানসিকভাবে পুরোপুরি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
যুগান্তরকে ওই শিক্ষার্থী বলেন, এসএসসি ও এইচএসসি সম্মিলিত ফলাফলের ভিত্তিতে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারতাম। আমার জীবনটা টেলিটক মোবাইল ফোন শেষ করে দিয়েছে। এখন পর্যন্ত এসএমএস ফেল দেখাচ্ছে টেলিটক। তথ্য প্রযুক্তির যুগে এমন ভুল কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।
তাহিরার মা সেলিনা খানম বলেন, পরীক্ষার সময় মেয়ে রাত জেগে পড়াশোনা করছে। সঙ্গে আমিও রাত জেগেছি। অসুস্থ মেয়ে অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করেছে। পরীক্ষার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ঢাকায় বাসা ভাড়া করে কোচিং করিয়েছি। এমন ফলাফলের পরে লজ্জায় মানসিক কষ্টে যদি আমার মেয়ে কোন দুর্ঘটনা ঘটাতো তাহলে এর দায়ভার কে নিত?
বোর্ডের গাফেলতির কারণে এমনটা হয়েছে যার দায়ভার বোর্ডকেই নিতে হবে বলছেন বরগুনা সরকারি কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীরা।
বরগুনা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর আবদুস ছালাম বোর্ডকে দায়ী মনে করলেও তিনি বলেন, বোর্ডের বিরুদ্ধে মন্তব্য করতে পারছি না।
তবে তিনি বলেন, প্রথমে ফেল দেখিয়েছে এখন দেখছি পাস।
বরিশাল বোর্ড চেযারম্যান প্রফেসর মো. ইউনুছের কাছে তাহিরা খানের ভাই যমুনা টিভির বরগুনা প্রতিনিধি ইমন খান ২২ ডিসেম্বর বরিশাল বোর্ডে যান। তাহিরা খানের রোল নম্বর দিলে বোর্ডের চেয়ারম্যানের মোবাইল ফোনে এখনও দেখান ওই ছাত্রী ফেল করেছে।
এরপর তাকে তাহিরা খানের একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট দেখালে তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায় আমরা টেলিটকের মাধ্যমে ফলাফল দেখি। কিন্তু ফলাফল না মিললে বোর্ডের ওয়েবসাইট দেখি। আমি তো বুঝতে পারিনি আপনি এই সমস্যা নিয়ে এসেছে, আমি মনে করছি আপনি কোনো ফলাফল জানতে চেয়েছেন। তাই সহজে মোবাইলের টেলিটক থেকে বের করে দেখাতে চাচ্ছি। আর টেলিটক তো মানদাতার আমলের!
বোর্ড চেয়ারম্যান আরও বলেন, কোনো শিক্ষার্থীর সমস্যা থাকলে তা আবেদন করলে সিস্টেম এনালিস্টকে দেখতে বলি এবং দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হয়।
তিনি বলেন, হাজার হাজার শিক্ষার্থী সব বিষয়ের ফলাফল পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সফটওয়ারে মিলানো সম্ভব নয়।
তাহিরা খানের অপুরণীয় ক্ষতির নিজ মুখে স্বীকার করলেও শিক্ষা জীবন থেকে একটি বছর হারিয়ে যাওয়া দায়ভার কার সে বিষয় কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি বোর্ড চেয়ারম্যান।