November 11, 2024, 12:53 am
নিজস্ব প্রতিনিধি, চকরিয়া:
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলাধীন কিশলয় আদর্শ শিক্ষা নিকেতনের কেরানী সেলিম বিদ্যালয়ের হোস্টেল সুপার পীযুষ কান্তি শর্মা ও তিন জন ছাত্রের সহযোগিতায় গত ১০ সেপ্টেম্বর একই বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাছির উদ্দীনকে ব্যাপক মারধর করে জখম করেছে।
নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, ঐ দিন দুপুর ১:৪৫ ঘটিকায় শিক্ষক নাছির উদ্দীন বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে দুপুরের খাবার খেতে যান। এসময় কেরানী সেলিম ও হোস্টেল সুপার পীযুষ কান্তি শর্মা তাকে দেখে তার দিকে এগিয়ে আসেন এবং তাঁকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন আক্রমণাত্মক কথাবার্তা বলতে থাকেন। কেরানী সেলিম নাছির উদ্দীনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনারা সবাই আমার পদ পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা বলছেন। আপনারা নিজ নিজ জায়গায় থেকে স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করুন। আমার ব্যাপারে কোন ধরনের নাক গলাবেন না। আমার ব্যাপারে কোন ধরনের নাক গলালে আমি দেখে নেব।” জবাবে নাছির উদ্দীন বলেন,”এখানে অনিয়ম ও অন্যায় হলে সে বিষয়ে কথা বলাও একজন শিক্ষকের নৈতিক দায়িত্ব।” একথা বলার সাথে সাথে কেরানি সেলিম নাছির উদ্দীনকে মারতে তেড়ে আসেন। এসময় হোস্টেল সুপার পীযুষ কান্তি শর্মা শিক্ষক নাছির উদ্দীনকে চেপে ধরেন এবং কেরানী সেলিম নাছির উদ্দীনকে ভাতের প্লেট, গ্লাস ও চেয়ার দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকেন। এক পর্যায়ে শিক্ষক নাছির উদ্দীন নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে হোস্টেলের ডাইনিং থেকে বের হয়ে নিজেকে রক্ষার জন্য শিক্ষক মিলনায়তনের দিকে দৌড়ে যেতে থাকেন। যাওয়ার পথে তিনি বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ও শিক্ষক প্রতিনিধি মুমিনুল হক চৌধুরী মামুন কে মসজিদে দেখতে পেয়ে তাঁকে বাচানোর জন্য অনুরোধ করেন।
ঘটনার আকস্মিকতা ও তীব্রতা অনুধাবন করে মুমিনুল হক চৌধুরী মামুন মসজিদ থেকে দ্রুত বের হয়ে শিক্ষক নাছির উদ্দীনের দিকে আসেন। তখন শিক্ষক নাছির উদ্দীন তাঁকে ব্যাপকভাবে মারধর করার বিষয়টি উনাকে অবহিত করেন এবং তাঁকে প্রাণ রক্ষার জন্য সহযোগিতা করতে বলেন। সিনিয়র শিক্ষক ও শিক্ষক প্রতিনিধি মুমিনুল হক চৌধুরী মামুন এর সাথে কথা চলাকালীন উনার সম্মুখে কেরানী সেলিম পুনরায় শিক্ষক নাছির উদ্দীন কে মুখে প্রচন্ডভাবে আঘাত করে। তাছাড়া হোস্টেল সুপার পীযুষ কান্তি শর্মার নির্দেশ ও উস্কানিতে বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শাখার তিনজন ছাত্র শামীম, রায়হান ও জুলিয়ান শিক্ষক নাছির উদ্দীনকে পিছন থেকে হাত চেপে ধরে তাকে প্রচন্ড মারধর করে জখম করে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কেরানী সেলিমকে সাত দিনের কর্মবিরতি প্রদান করা হয়েছে এবং ঘটনাটি তদন্ত করার জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু কেরানী সেলিমকে সাত দিনের কর্মবিরতি প্রদান করা হলেও সে অফিসের চাবি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র প্রধান শিক্ষককে প্রদান না করে উক্ত আদেশ অমান্য করে চলেছে বলে জানা গেছে। তাছাড়া সে বহিরাগত কিছু সন্ত্রাসী নিয়ে বিদ্যালয়ে ও বিদ্যালয়ের আশেপাশে ঘোরাফেরা করে ত্রাস সৃষ্টি করছে।
এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক মন্ডলী, বিদ্যালয়ের বর্তমান ছাত্রছাত্রীরা এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং কেরানী সেলিম ও হোস্টেল সুপার পীযুষ কান্তি শর্মার বিরুদ্ধে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। তাছাড়া বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এবং উনারা কেরানী সেলিম কে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করে শিক্ষাঙ্গনের পবিত্র পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।