December 11, 2024, 4:59 am
নাজিম উদ্দিন,পেকুয়া (কক্সবাজার)
টানা কয়েকদিনের ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা মাতামুহুরি নদীর পাহাড়ি ঢলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। কক্সবাজারের পেকুয়ায় পানির নিচে তলিয়ে গেছে সাত ইউনিয়নের অন্তত দেড় লক্ষাধিক মানুষ। প্রায় ঘরে কোমর সমান পানি উঠেছে। মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে। সুপেয় পানি ও খাদ্য সংকটে এক দূর্বিসহ দিন পার করতে হয়েছে টানা দুদিন।
সরেজমিন দেখা গেছে,শতাধিক রাস্তাঘাট পানির নিচে ডুবে গেছে। তলিয়ে গেছে প্রায় চার শত হেক্টর চিংড়ি ঘের ও মাছের খামার। তবে গতকাল বুধবার থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। কিছু কিছু রাস্তাঘাট থেকে পানি নেমে গেছে। নিম্নঞ্চালে এখনো হাটু সমান পানি। পানি নিস্কাশনের জন্য পাঁচটি পয়েন্টে বাঁধ কেটে দেওয়া হয়েছে। কেটে দেওয়া অংশে পানি বেরিয়ে পড়ছে। ধীরে ধীরে পানি কমতে শুরু করেছে।
এদিকে বন্যার্তদের মাঝে ত্রান সহায়তায় জনপ্রতিনিধির পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনও এগিয়ে এসেছেন। যার যার সাধ্যমতে তাঁরা শুকনো খাবার ও রান্নাকরা খাবার নিয়ে নৌকা যোগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার বিলি করতে দেখা গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খাবার ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা।
আবুল কালাম,বশির আহমদসহ আরো কয়েকজন বলেন,তিনদিন ধরে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছি। কোমর সমান ঘরে পানি। ঘরের ছালায় বউ বাচ্চা নিয়ে আছি। কয়েক দফা ত্রান সহায়তা পেয়েছি।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন,গত দুদিন ধরে তিনি কয়েকটি ইউনিয়নের মাঝে চারজন দূর্গত মানুষের কাছে শুকনো ও রান্না করা খাবার বিলি করেছেন। তিনি তাঁর সাধ্যমত দূর্গতদের পাশে থাকার চেষ্টা করছেন বলে জানান।
টইটং ইউপির চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন,তাঁর ইউনিয়নে দুহাজার পানিবন্দি মানুষের কাছে শুকনো ও রান্না করা খাবার পৌঁছে দিয়েছেন।
পেকুয়া সদর ইউপির চেয়ারম্যান বাহদুর শাহ বলেন, তাঁর পরিষদের পক্ষ থেকে ১০ হাজার দূর্গত মানুষের জন্য রান্নাকরা খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ও আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষের কাছে এসব খাবার পৌঁছে দিবেন। স্ব স্ব ওয়ার্ডের মেম্বারদের মাধ্যমে এসব খাবার বিতরণ করা হবে।
জেলা পরিষদের সদস্য এইচ এম শওকত বলেন, সাংসদ জাফর আলম ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নির্দেশনা ও সহায়তায় এবং নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ৮হাজার পরিবারের মাঝে রান্ন করা খাবার দিয়েছি। ১২শত পরিবারকে ৫কেজি করে চাল বিতরণ করেছি। ত্রান সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান শওকত।
এছাড়া বাংলাদেশ নৌবাহির পক্ষ থেকেও বানবাসির জন্য ত্রান সহায়তা দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে তিন হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী ও এক হাজার পরিবারের মাঝে তাঁরা রান্নাকরা খাবার পৌছে দিয়েছেন।
পেকুয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতি ও কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি.এর পক্ষে রান্নাকরা ও শুকনো খাবার পৌছে দিয়েছেন পানিবন্দি মানুষের কাছে। বাজার সমিতির পক্ষে দুহাজার ও ক্রেডিট ইউনিয়নের পক্ষে ৮হাজার পরিবারের মাঝে বিরিয়ানি খাবার তুলে দিয়েছেন।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূর্বিতা চাকমা বলেন, পেকুয়ার বন্যা পরিস্থিতি বর্তমানে উন্নতির দিকে। মানুষের খাবার সংকট নিরসনে উপজেলা প্রশাসন থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বন্যা কবলিত প্রায় পরিবারের মাঝে আমরা ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছি। সেইসাথে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সমাজের বিত্তশালীরাও এতে কাজ করে যাচ্ছেন। আশা করি শীঘ্রই এ সংকট মোকাবিলা করে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরবে পেকুয়াবাসী।